সরকারি ভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পোল্যান্ড যাওয়ার উপায় ২০২৫
আপনি কি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ,স্টুডেন্ট ভিসায় বা ভ্রমণ ভিসায় পোল্যান্ড যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু কিভাবে পোল্যান্ড ভিসা আবেদন করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না, বা জানেন না। তবে আসুন জেনে নিই বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড ভিসা আবেদন করার নিয়ম ও খরচ সম্পর্কে।
পোল্যান্ড পূর্ব ইউরোপের একটি ব্যস্ততম শহর। এদেশের জীবনযাত্রার মান খুবই উন্নত মানের যার ফলে এখানে অনেকেই আসতে চায়। এজন্যে যারা পোল্যান্ড আসতে চান কিভাবে পোল্যান্ডের ভিসা আবেদন করবেন সে সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে পড়ুন।
পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগবে
আপনি যদি কোন এজেন্সি ছাড়াই পোল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চান। তাহলে ভিসা আবেদন, ফ্লাইট ভাড়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সহ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা লাগবে। এক্ষেত্রে সকল প্রসেস আপনার নিজেই করতে হবে। আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় পড়েন যেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় হয়ে যাবে।
এছাড়াও ভ্রমণ ভিসায় পোল্যান্ড যেতে চাইলে ১-১.৫ লাখ টাকা লাগবে। তবে পোল্যান্ড থেকে যদি আপনার বন্ধু-বান্ধব ভিসা পাঠিয়ে দেয় সে ক্ষেত্রে এক লাখ বা তার কম খরচ হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কোন এজেন্সির মাধ্যমে পেতে চান। তাহলে আপনার প্রায.৮,০০,০০০ থেকে১০,০০,০০০ টাকা লাগবে। এর কারণ হচ্ছে এজেন্সি মালিকরা ওয়ার্ক পারমিট টি দুই লাখ টাকায় কিনে আপনার কাছে সেটা ১০ লক্ষ টাকা বিক্রি করে। মাঝখানে যত টাকা আপনি বেশি দিলেন তত টাকা প্রত্যেক এজেন্সি মালিক এখান থেকে লাভ করে।
এজন্য আপনি যদি কোন দালাল এর সাহায্যে পরান যেতে চান তাহলে সাধারণ খরচের তুলনায় আপনাকে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হবে। এজন্য সবচেয়ে ভালো হবে সরকারিভাবে বা নিজ প্রচেষ্টায় পোল্যান্ড ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করা। তাহলে আপনি সবচেয়ে কম খরচে বিদেশ যেতে পারবেন।
পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা অনলাইন আবেদন
আপনি পোলান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চাইলে, পোল্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানি খুজে সেখানে আবেদন করতে পারেন অথবা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারেন। কোন এজেন্সির মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে চাইলে, প্রথমে এজেন্সির কাছে আপনার সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত পাঠিয়ে দেবেন। এজেন্সি আপনার হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে আবেদন করবে।
কোন কোম্পানি যদি আপনার সিভি দেখে পছন্দ করে বা ভালো লাগে, তখন তারা এজেন্সিকে জানাবে এবং আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। এবং আপনাকে একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে। আপনার ইন্টারভিউ যদি ভালো হয় তখন তারা আপনার সিভিটা পোল্যান্ডের Solicitor or Attorney ্কে সাবমিট করবে। আপনার সিভির বিপরীতে Attorney পোল্যান্ডের লিডার মিনিস্ট্রি থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিবে।
পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফ্রম বাংলাদেশ
বাংলাদেশে পোল্যান্ডের কোন এম্বাসি নেই। এজন্য আপনি যদি পোল্যান্ডে ভ্রমণ ভিসা, বিজনেস ভিসায় যেতে চান, তাহলে Schengen ভিসা নিতে Sweden Embassy, Bangladesh থেকে আবেদন করতে পারেন।
পোল্যান্ডে লং টাইম ভিসা অর্থাৎ স্টুডেন্ট ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করতে চাইলে প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র একত্র করে Poland Embassy, New Delhi থেকে ভিসা আবেদন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে পোল্যান্ডের এম্বাসি নেই।
বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যেতে চাইলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে, পোল্যান্ড ভিসা এম্বাসি ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। তারপর পোলান্ডের ভিসা এম্বাসি নিউ দিল্লি তে গিয়ে সেটি জমা দিতে হবে। এবং সেখানেই KYC সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ধাপ শেষ করতে হবে। বাংলাদেশে পোল্যান্ডের ভিসা এম্বাসি নেই এজন্য নিউ দিল্লি তে গিয়ে এটা জমা দিতে হবে।
পোল্যান্ডে ভিসা আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে Poland Ministry of Affairs এই ওয়েবসাইট থেকে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। তবে বাংলাদেশে পোল্যান্ডের এম্বাসি না থাকায় পোল্যান্ড এম্বাসি, New Delhi থেকে আবেদন করতে হবে।
ভিসা আবেদন ফরম পূরণের পর সাবমিট করবেন। সকল তথ্য অবশ্যই পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড দিতে হবে। আবেদন সম্পন্ন হলে পোল্যান্ড এম্বাসির VFS Global এর ওয়েবসাইটে Book an Appointment অপশন থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে।
তারপর পোল্যান্ড এম্বাসির, দিল্লিতে উপস্থিত থেকে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফি, বায়োমেট্রিক ফি, এবং আবেদন ফি জমা দিতে হবে। আপনার যদি ভিসা অনুমোদন হয়ে যায় তখন আপনি পোল্যান্ডের ভিসা পেয়ে যাবেন। এবং আপনি পোল্যান্ডে যেতে পারবনে।
পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য কি কি লাগে
বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড ভিসা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে ভিসা আবেদনের ফরম পূরণ করতে হবে। ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করতে কি কি লাগে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা তালিকা নিচে দেয়া হল।
- পাসপোর্ট(কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ হতে হবে ১ বছর হলে ভালো হয়।)
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি দুই কপি
- পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে এইচ,এস, সি
- কোন কোম্পানি হতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সে বিষয়ে একটি ডকুমেন্ট
- নির্দিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা
- চাকরির অফার লেটার
- ভিসার আবেদন পত্র, ইত্যাদি
বাংলাদেশ থেকে পলান্ড যাওয়ার স্বল্প মেয়াদী ভিসার ক্ষেত্রে যা যা লাগবে
- পাসপোর্ট(কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ, ১ বছর হলে ভালো হয়)
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি দুই কপি
- জীবন বৃত্তান্ত বা বায়োডাটা
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- ফ্লাইট টিকিট এবং হোটেল বুকিং
- ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য
- পোল্যান্ড থেকে আমন্ত্রণ পত্র ইত্যাদি
পোল্যান্ডে ভিসার জন্য আবেদন করার পর আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে হবে। ইন্টারভিউ এর সাথে সাথে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এবং কোন কাজের জন্য আপনি পোল্যান্ডে আসবেন, সে বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে। পোলান্ড ওয়ার্ড পারমিট পাওয়া একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে আপনি যদি প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে প্রস্তুতি নেন, এবং সকল পদক্ষেপ সঠিকভাবে অনুসরণ করে। তাহলে আপনি পোল্যান্ডের ভিসা পেতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশিরা পোল্যান্ডে কি কি কাজের ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যায়
বাংলাদেশিরা যে সকল কাজের জন্য পোল্যান্ডে যায়, সেগুলোর জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের তেমন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। সেজন্যে বাংলাদেশীরা পোল্যান্ডের কাজের ভিসা পেতে তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশিরা পোল্যান্ডে কাজের ওয়ার্ল্ড পারমিট ভিসায় যেগুলো থাকে তা হলঃ
উৎপাদন কাজঃ বাংলাদেশিরা পোল্যান্ডের শিল্প কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
নির্মাণ কাজঃ পোল্যান্ডে নির্মাণ কাজে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
পরিষেবা খাতঃ হোটেল, রেস্তোর, ক্লিনার ও অন্যান্য পরিষেবা খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে পোল্যান্ড ভিসা এজেন্সি
বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভিসা এজেন্সি রয়েছে। যারা আপনাকে পোল্যান্ড যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক এবং আনুষাঙ্গিক সকল রকমের কাজ করতে সহযোগিতা করে। আসুন জেনে নিই, বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল এজেন্সি গুলো সহযোগিতা করতে পারে তাদের তালিকা।
- Visa Thing
- Sticker Visa
- Visa Hub
- OBOKASH
- Skyways Travels
এগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে অনেক ভিসা এজেন্সি রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আপনি ভিসা আবেদন করার মাধ্যমে পোল্যান্ড যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল রকমের সহযোগিতা পেতে পারেন।
পোল্যান্ডে শ্রমিকদের বেতন কত
যে কোন দেশেই শ্রমিকদের কাজের পারিশ্রমিক নির্ভর করে তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং অবস্থানের উপর। তেমনি পোল্যান্ডে বেতন নির্ভর করে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং অবস্থানের উপর। তবে বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডে বেতন অনেক বেশি। পোল্যান্ডে সর্বনিম্ন বেতন ১,০০,০০০ টাকা(৩৪৯০ জোলোটি)।
এই বেতন মূলত নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং অন্যান্য নিম্ন বা কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাজে প্রযোজ্য।উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের কাজের বেতন অনেক বেশি পোল্যান্ডে।যেমন চিকিৎসকের বেতন ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ জলোটি (প্রায় ৩,০০,০০০ - ৬,০০,০০০ হতে পারে।
পোল্যান্ডে সাধারণত মাসিক বেতন দেওয়া হয়। বেতনের পাশাপাশি পোল্যান্ডের কর্মচারীদের অনেক সুবিধা রয়েছে ,যেমনঃ চাকরির সুরক্ষা, ছুটি, স্বাস্থ সুবিধা,বোনাস,পেনশন ইত্যাদি। পোল্যান্ডে যারা চাকরি করে তারা চাকরির পাশাপাশি এসকল সুবিধা পেয়ে থাকেন।
লেখকের মন্তব্য
পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে।পোল্যান্ডে যাওয়ার আগে ভিসা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যেটি ভালো মনে হবে সেই ভিসায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন।এবং আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে যেতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া উচিত। কারণ অনেক ভুয়া এজেন্সি রয়েছে তারা টুরিস্ট ভিসায় বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। যার ফলে প্রবাসে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টস করতে ভুলবেন না। এবং শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দেবেন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url