জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ আবেদন করবেন যেভাবে
আপনি কি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যেতে চাচ্ছেন এবং জার্মানিতে কোন কোন কাজ পাওয়া যায়, জার্মানি ভিসার দাম কত, জার্মানি যেতে কত খরচ হয় এবং জার্মানিতে কাজের বেতন কত ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন তাহলে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যাওয়ার বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জার্মানি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র। প্রতিবছর হাজারো বাংলাদেশী শ্রমিক ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যাচ্ছে। কারণ জার্মানিতে প্রচুর কাজের সম্ভাবনা ও অন্যান্য দেশের তুলনায় বেতন অনেক বেশি। আপনি যদি জার্মানিতে যেতে চান অবশ্যই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে হবে।
বর্তমান বাংলাদেশ থেকে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু আছে এবং অনেক মানুষ ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে পাড়ি জমাচ্ছে। যদি আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যেতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন তাহলে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও আবেদন
আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যেতে চাচ্ছেন। বর্তমান জার্মানি যাওয়ার জন্য সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কারণ বর্তমানে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু রয়েছে। জার্মান সরকার প্রতি বছরে একটি নির্দিষ্ট সময় কাজের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দেশের লোক নিয়ে থাকে।
আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যেতে চাইলে অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আপনি চাইলে নিজে নিজেই আবেদন করতে পারবেন। আবার কোন এজেন্সির সাহায্য নিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন আপনি সরকারিভাবে করতে পারেন আবার বেসরকারিভাবেও করতে পারবেন। তবে বেসরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করলে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। যদি আপনার কোন আত্মীয় স্বজন বা বন্ধুবান্ধব জার্মানিতে থাকে তাদের মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার খরচ অনেক কমে আসবে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যাওয়ার জন্য প্রথমত আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে উপযুক্ত চাকরি খুঁজে বের করুন। যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে আপনি চাকরি পাবেন সেখান থেকে একটি জব অফার লেটার সংগ্রহ করুন। তারপর আপনার পাসপোর্ট, চাকরির অফার লেটার, বায়োডাটা, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, কাজের অভিজ্ঞতা সনদসহ প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট প্রস্তুত করুন।
জার্মানি এম্বেসি বা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইট থেকে ওয়ার্ড পারমিট ভিসার আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন। আবেদন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে আপনার প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট এডজাস্ট করে জার্মানি এম্বাসিতে জমা দিন।
আবেদন ফরম জমা দেয়ার পর অ্যাম্বাসিতে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য আপনাকে উপস্থিত হতে হবে। আপনার আবেদন ও ইন্টারভিউ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রসেসে শুরু হবে। এবং অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আপনি ভিসা পেয়ে যেতে পারেন। আপনার ভিসা মঞ্জুর হয়ে গেলে আপনার পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্প করা হবে। এভাবে ওয়ার্ড পারমিট ভিসা কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনে কি কি কাগজপত্র লাগবে
জার্মানিতে পারমিট ভিসায় আবেদন করার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। জার্মানিতে কাজের যোগ্যতা অর্জনের জন্য আপনাকে এ সকল ডকুমেন্ট দিতে হবে। অবশ্যই আপনাকে একটা প্রোটোকলের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
আবেদনের সময় অতিরিক্ত প্রমাণ প্রদান করতে হবে, জার্মান কর্তৃপক্ষ কাজ করার জন্য আপনার অনুরোধ সফলভাবে অনুমোদন করে। আপনাকে জার্মানিতে কাজ করার দক্ষতা ও ইচ্ছার প্রমাণপত্র হিসাবে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আসুন জেনে নিই কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- বৈধ পাসপোট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ হতে হবে)
- আবেদনপ্রত্রের স্বাক্ষরিত কপি ২টি
- জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট নূন্যতম ৩ মাসের
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- দক্ষতার সার্টিফিকেট
- পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি রঙ্গিন ছবি
- ILTS সার্টিফিকেট
- যে কোম্পানিতে যাবেন সে কোম্পানির অনুমতি পত্র
জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আবেদন করতে উপরোক্ত ডকুমেন্ট গুলো যুক্ত করতে হবে। অবশ্য ভিসার ধরণ অনুযায়ী কাগজপত্রের ভিন্নতা হতে পারে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যেসকল কাজ পাবেন
ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে প্রচুর কাজের সম্ভবনা রয়েছে। প্রবাসী বাঙালিরা জার্মানিতে তাদের দক্ষতার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়ে থাকে। এজন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যাওয়ার আগে জার্মানিতে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি সেটা জানা জরুরি। জার্মানিতে যেসকল কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি তা হলো
ডাক্তার
নার্স
ক্লিনার
হাউজ কিপিং
ড্রাইভিং
ফুড সার্ভিস
কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার
হোটেল বয়
সিকিউরিটি গার্ড
মেকানিক্যাল
ইলেকট্রিশিয়ান
প্লাম্বার
কৃষি কাজ ইত্যাদি
জার্মানিতে এই কাজগুলোর চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি চাইলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আসতে পারেন জার্মানিতে এই কাজ করার জন্য।
জার্মানি ভিসার মূল্য বা দাম কত
বর্তমান জার্মানি যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়া যায়। ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসার মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার দাম অন্যান্য ভিসার থেকে বেশি হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিই ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসার মূল্য বা দাম।
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসার দাম জার্মানিতে ৫০০০০০ থেকে ৬০০০০০ টাকা লাগবে।
- কোম্পানি ভিসার দাম ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা।
- জার্মানিতে টুরিস্ট ভিসার নূন্যতম মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা।
- স্টুডেট ভিসার মূল্য জার্মানিতে ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাগবে।
- জার্মানিতে ড্রাইভিং ভিসার মূল্য ৩,৫০,০০০ টাকা থেকে ৪,০০,০০০ টাকা
জার্মানিতে ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসার মূল্য বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে ভিসার মূল্য কম-বেশি হতে পারে।
জার্মানি যেতে মোট কত খরচ হতে পারে
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি একটি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং উচ্চ বেতনের কারণে এদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ পাড়ি জমায়। কিন্তু অনেকেই জানে না ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যাতে মোট কত টাকা লাগতে পারে। আসুন জেনে নেই জার্মানি যেতে মোট কত টাকা লাগতে পারে।
বর্তমানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে দুই ভাবে যাওয়া যায়। প্রথমত সরকারি ভাবে দ্বিতীয়ত বেসরকারিভাবে আপনি জার্মানি যেতে পারবেন। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে খরচ অনেক বেশি হয়। সরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যেতে আপনার খরচ হবে আট লক্ষ থেকে ৯ লক্ষ টাকার মত। তবে আপনি যদি বেসরকারিভাবে বা কোন এজেন্সির মাধ্যমে জার্মানি যেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হবে।
এজন্য ওয়র্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যাওয়ার সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে সরকারিভাবে যাওয়া। আর এজন্যে সরকারি সার্কুলারের জন্য অপেক্ষা করা। সরকারি সার্কুলারের মাধ্যমে জার্মানি যেতে খরচ অনেক কম হবে।
তবে জার্মানি ভিসা কাটা করে, কাগজপত্র তৈরি খরচ, বিমানের ধরন এবং এজেন্সির উপর নির্ভর করে জার্মানিতে যেতে আপনার ১৩ লাখ থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। জার্মানিতে কাজের ক্যাটাগরি অনুযায়ী এবং সময়ের ব্যবধানে খরচ কম বেশি হতে পারে।
জার্মানিতে কত বেতন পাবেন
জার্মানি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি এদেশের জীবনযাত্রার নাম অনেক উন্নত। এদেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রচুর কাজ রয়েছে। জার্মানিতে সর্বনিম্ন একটি বেতন কাঠামো রয়েছে। এদেশে ঘন্টা অনুযায়ী কাজের বেতন নির্ধারণ করা হয়। জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা আপনার বেসিক ডিউটি করতে হয়। প্রতি ঘন্টায় আপনি বেতন পাবেন ১২ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় হবে ১৪৫০ টাকা।
এক্ষেত্রে আপনি যদি শুধু বেসিক ডিউটি করেন তাহলে মাস শেষে আপনি পাবেন ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। এটি হচ্ছে জার্মানিতে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল যা একজন নতুন বা অনভিজ্ঞ কর্মীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটি যে কোন কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জার্মানিতে একজন শ্রমিকের মাসে গড়ে বেতন ৩৫০০ টাকা থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত যা বাংলাদেশী টাকায় হবে ৪ লক্ষ ৯ হাজার টাকা থেকে চার লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আপনি যদি এরকম টাকা ইনকাম করতে চান। তাহলে আজ থেকে চেষ্টা করুন ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যাওয়ার জন্য।
জার্মানি ভিসা পাওয়ার উপায়
জার্মানিতে কাজের উদ্দেশ্যে অনেকেই যেতে চান কিন্তু কিভাবে যেতে হবে বা যাওয়ার প্রসেসিং কি এটা অনেকেই জানেন না। জার্মানিতে যাওয়ার উপায় তিনটি যথা,
- সরকারিভাবে
- বেসরকারিভাবে
- আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে
আপনি যদি সরকারিভাবে জার্মানি যেতে চান তাহলে জার্মানি সার্কুলারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জার্মান সরকার যখন কর্মী নিয়োগের জন্য সার্কুলার দিয়ে থাকে সে সময় বাংলাদেশে জার্মানি এম্বাসিতে যেয়ে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। আপনি চাইলে অনলাইন এর মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন সংগ্রহ করতে পারেন।
অ্যাপ্লিকেশনটি সঠিকভাবে পূরণ করে আপনার প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট যুক্ত করে আবেদন করতে হবে। আপনার সকল তথ্য সঠিক হলে আবেদন সম্পূর্ণ হবে। এবং জার্মানি যাওয়ার জন্য আপনি অনুমতি পাবেন। এক্ষেত্রে অল্প খরচেই আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যেতে পারবেন।
আপনি যদি বেসরকারিভাবে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে চান ,তাহলে আপনাকে কোন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি হবে।
এছাড়াও আপনার কোন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব জার্মানিতে থাকে এবং তাদের মাধ্যমে যদি আপনি জার্মানিতে যেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার শুধু ভিসা খরচ এবং বিমান ভাড়া দিয়েই জার্মানিতে যেতে পারবেন। আপনি সেই ক্ষেত্রে জার্মানিতে যে কোন কাজ করার সুযোগ পাবেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জার্মানিতে যাওয়ার জন্য সব রকমের প্রসেস ও উপায় সম্পর্কে জানতে পারলাম। জার্মানিতে প্রচুর কাজের সম্ভাবনা রয়েছে এবং কাজের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি বছর জার্মান সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এজন্য আপনি চাইলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানিতে যেতে পারবেন।
আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন। যদি কোন প্রশ্ন বা জানার থাকে অবশ্যই কমেন্টস করবেন। ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url