অ্যাজমা রোগীর লক্ষণ ও মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 

আপনি দীর্ঘদিন যাবত অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে ভুগছেন? বা আপনার বাড়ির কেউ দীর্ঘদিন যাবত অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে ভুগছে। দীর্ঘদিন ওষুধ খাওয়া বা ডাক্তারি চিকিৎসায় ভালো হচ্ছেন না। আসুন জেনে নিই কি কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ হয় ,লক্ষণ কি এবং কি করলে অ্যাজমা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
অ্যাজমা-রোগীর-লক্ষণ-ও-মুক্তির-উপায়-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
অ্যাজমা বা হাঁপানি একটি ফুসফুস জনিত রোগ। অ্যাজমা দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ এর ফলে প্রচুর পরিমাণে শ্বাসকষ্ট হয়। বিভিন্ন কারণে অ্যাজমা রোগ হতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি যেকোন বয়সী মানুষের হতে পারে। এ রোগ থেকে মুক্তির উপায় অনেকের অজানা।তাই আসুন জেনে নিই অ্যাজমা রোগীর কারণ বা লক্ষণ এবং মুক্তির উপায় সম্পর্কে।

ভুমিকা

অ্যাজমা বা হাঁপানি মুলত ফুসফুসের প্রদাহ জনিত একুটি রোগ। এর ফলে অনেক শ্বাসকষ্ট হয়, বুকের মধ্যে সাঁ সাঁ শব্দ করে, রাতে ঘুমাতে পারে না, কাঁশি হয়,বুকে চাপ বেধেঁ থাকে ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।অ্যাজমা সম্পর্কে জানতে পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন এবং অ্যাজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

এজমা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়

ইজমা বাহার পানি রোগের লক্ষণ বা কারণ বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানতে পারেনি। কি কি কারনে অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়। তবে বিভিন্ন কারণে এজমা রোগ হতে পারে। চলুন জেনে নেই অ্যাজমা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি।
  • দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে ভুগলে
  • বুকে চাপ সৃষ্টি হলে
  • অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে গেলে
  • দিন-রাত কাশি থাকলে, বিশেষ করে রাতে কাশি বৃদ্ধি পেলে
  • সবসময় বুকের মধ্যে সাঁ সাঁ শব্দ হলে
  • ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে শিতকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে

এই লক্ষণগুলো যদি কারোর মধ্যে লক্ষিত হয় তাহলে বুঝবেন সে অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়েছে।

অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণসমুহ

অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের কারণে অনেকেই চিন্তিত হলেও গবেষকদের কাছে এখনো অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের নির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে কিছু কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে এজমা বা হাঁপানি রোগটি বাড়তে পারে। চলুন জেনে নিই কি কি কারন অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ হয় সে সম্পর্কে।
  • জেনেটিক্স বা বংশগত কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ হতে পারে। আপনার বংশের কেউ যদি এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে তার পরবর্তী বংশধরের যেকোনো ব্যক্তির এ রোগ হতে পারে।
  • অ্যাজমা অন্যতম প্রধান কারণ গুলো হল ধুলা, ধোয়া, পশু পাখির লোম, তুলোর আঁশ, বিছানার ধুলা, বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের রেণু ইত্যাদি। উপরোক্তার বিষয়গুলো অ্যাজমার ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
  • যাদের শরীরেঅ্যাজমা রয়েছে তারা যদি ধূমপানকারী ব্যক্তি সংস্পর্শে আসে তবে তাহলে অ্যাজমা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া ও মোটা হওয়ার ফলে অ্যাজমা বৃদ্ধি পেতে পারে।ধোয়া বা অন্যান্য দূষণ গাড়ি বস্তুর সংস্পর্শে আসলে এজমা হতে পারে।
  • উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক, কৃষিকাজ, হেয়ার ড্রেসিং ইত্যাদি মত পেশা সংক্রান্ত কাজে সংস্পর্শে আসলে।
  • যে সকল বস্তুতে অ্যাজমা রয়েছে তা সংস্পর্শে আসলে।
  • ঋতু পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে শীতকালে জ্বর, সর্দি, কাশি অ্যাজমার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে অ্যাজমা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • অতিরিক্ত মানসিক টেনশন বা ও অবসাদ অ্যাজমার সমস্যাকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
  • কিছু কিছু খাবার যেমন চিংড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বেগুন ইত্যাদি খেলে অ্যাজমার মাত্রা বাড়তে পারে।

উপরোক্ত এসকল বিষয়গুলো অ্যাজমা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এজন্য যাদের অ্যাজমা রয়েছে তারা এসকল বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকুন।

শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

অ্যাজমা রোগীরা অনেক পেরেশানে বা চিন্তায় বিভোর হয়ে আছেন ,কিভাবে িএই রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।দূঃখের বিষয় হলেও এটাই সত্য যে অ্যাজমা বা হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
শ্বাসকষ্ট-থেকে-চিরতরে-মুক্তির-উপায়
কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত অ্যাজমা রোগের সুনিদিষ্ঠ কোন চিকিৎসা আবিস্কার হয় নি।তবে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যাজমা রোগ নিয়ন্তণ করা সম্ভব।

রসুনঃ অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই রোগের চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে রসুন ব্যবহার করতে পারেন।এজন্য অ্যাজমা রোগীদের প্রচুর পরিমণে রসুন খাওয়া উচিত।

আদাঃ অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে আদা সুনাম অনেক। আদা শ্বাসনালীর সমস্যায় বেশ উপকারী। এক কাপ পানি মধ্যে আদ, মেথি,ও মধু মিশিয়ে ভালো করে জ্বাল দিন। এবং প্রতিদিন সকাল-সন্ধা এই আদা মিশ্রিত পানি পান করুন তাহলে উপকার পাবেন।
ডুমুরঃ শ্বাসকষ্টের সমস্যা সমাধানে ডুমুর অনেক উপকারী। এক গ্লাস পানির মধ্যে তিনটি শুকনো ডুমুর সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ডুমুরসহ ডুমুর ভেজানো পানি পান করুন। এভাবে কয়েক মাস বাড়িতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন আশা করি ভালো ফল পাবেন।

সরিষার তেলঃ অ্যাজমা বা হাঁপানি বেড়ে গেলে সরিষার তেল ও একটু কপুর মিশিয়ে হালকা গরম করেন। তারপর বুকে ও পিঠে মেসেজ করতে থাকেন। যতক্ষণ । অ্যাজমা স্বাভাবিক অবস্থায় না আসে ততসময় পর্যন্ত মেসেজ করুন। এর ফলে শ্বাসনালী পরিষ্কার হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।।

কফিঃ অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের জন্য কফি অনেক উপকারী। কেউ যদি নিয়মিত গরম কফি পান করে তাহলে তার শ্বাসনালী পরিষ্কার হয়। তবে অতিরিক্ত কফি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

লেবুঃলেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা অ্যাজমা সারাতে ভুমিকা রাখে। হাঁপানি রোগ প্রতিরোধে এক গ্লাস পানির মধ্যে লেবুর রস ও চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন। ফলে আপনার অ্যাজমার সমস্যা অনেক কমে যাবে।

কি খেলে অ্যাজমা ভালো হয়

অ্যাজমা হল ফুসফুসের প্রদাহ জনিত একটি সমস্যা। ঠিক কি কারণে অ্যাজমা হয় সে বিষয়ে আজ পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে অ্যাজমা থেকে মুক্তির জন্য খাবারের বিষয়ে প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত।
কি-খেলে-অ্যাজমা-ভালো-হয়
কোন খাবার খেলে অ্যাজমা হবে না, এবং কি খেলে অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়তে পারে সে সকল বিষয়ে উপর। আসুন জেনে নি কোন কোন খাবার খেলে এজমা ভালো হয়।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে অ্যাজমা হাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ভিটামিন ডি এর অভাব। যা অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এজন্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
আমাদের দেহে যদি ভিটামিনের ডি এর মাত্রা সঠিক পরিমাণে থাকে। তাহলে অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। এজন্য যাদের অ্যাজমা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মত তাদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত। এছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিমের কুসুম, মাশরুম, দই, কমলালেবুর রস ইত্যাদি খাওয়া উচিত।

সবজি ও ফালমূলঃ অ্যাজমার সমস্যা থেকে সমাধান পেতে সবজি ও ফরমুলের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি নিয়মিত সবজি ও ফলমূল সঠিক পরিমাণে খায় তাহলে অ্যাজমা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ফল যেমন আপেল, কলা, অ্যাভোকাডো ,বেদনা ,খেজুর ,ইত্যাদি এবং সবজি গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।

দানা জাতীিয় খাদ্যঃ আটা, ভোট্টা, মটরশুটি, ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের শস্য দানা পরিপূর্ণ থাকে একাধিক খনিজ দ্বারা যা অ্যাজমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্যে যারা আজমার সমস্যায় ভুগছেন তারা যদি নিয়মিত দানাদার জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন। তাহলে এজমার সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।

ম্যাগনেসিয়াম পূর্ণ খাবারঃ একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৮ বছরের নিচে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা অনেক কম যার ফলে তাদের অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ম্যাগনেসিয়াম পরিপূর্ণ খাবার গ্রহণ করতে হবে। ম্যাগনেসিয়াম পরিপূর্ণ খাবার হলো কুমড়ো, বীজ, কলা ,পালং শাক ও অন্যান্য শাকসবজি ইত্যাদি।

এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

যাদের শরীরে আজমা রয়েছে তারা ভুলেও কখনো এই খাবারগুলো খাবেন না। কারণ এ খাওয়ার ফলে অ্যাজমার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।অ্যাজমা বা হাঁপানি থেকে দূরে থাকতে হলে অবশ্যই আপনাকে এই খাবারগুলো পরিহার করে চলতে হবে। আসন জেনে নিই, কি সেই খাবার যা খেলে অ্যাজমা বা হাঁপানি বৃদ্ধি পায়।

  • যে সকল খাবারে প্রিজারভেটিভ দেয়া হয় সে সকল খাবার থেকে দূরে থাকুন.। বিশেষ করে সালফাইট যুক্ত খাবার যেমন আচার, বোতলজাত পণ্য,বা পানিও, শুকনো ফল ইত্যাদি। এ সকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে সালফাইট এসিড মেশানো হয়। অ্যাজমা রোগীরা যদি এই খাবারগুলো গ্রহণ করে তাহলে তাদের অ্যাজমা হাওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • গ্যাস উৎপাদন করে এমন খাদ্য যে সকল খাবার খেলে শরীরে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে সকল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। গ্যাস তৈরি করে এমন সব খাবার যেমন অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, ড্রিঙ্কস ,ভেনাস, পেঁয়াজ ,রসুন ইত্যাদি
  • অ্যাজমা থেকে দূরে থাকতে আইসক্রিম, দই, ঠান্ডা দুধ, ইত্যাদি থেকে দূরে থাক।
  • গরুর মাংস,ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, হাঁসের মাংস, নারিকেল, কাকড়া, লবস্টার, ইত্যাদি খাবারেও এলার্জি হয়।এজন্য অ্যাজমা থেকে দূরে থাকতে এ সকল খাবার পরিহার করে চলা উচিত।

লেখকের মন্তব্য

অমরা এত সময় অ্যাজমা বা হাঁপানি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।যারা অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে ভুগছেন তারা অবশ্যই এই পোস্টটি উপকৃত হবেন।পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। এবং অবশ্যই কমেন্টস করবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url