পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকে আমি পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। পালং শাক একটি শীতকালীন সবজি, যেখানে শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ফলিক অ্যাসিড, ও সেলেনিয়াম।
যেকোনো মানুষকে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকার জন্য এই উপাদানগুলো অত্যন্ত জরুরী। আর এজন্যেই আমাদের খাবার তালিকায় রাখতে হবে পালং শাক। পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি এ সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে পড়ুন
ভূমিকা
পালং শাকের বৈজ্ঞানিক নাম(Spinacia oleracea)। এটি এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। দক্ষিণ- পশ্চিম এশিয়াই পালং শাকের আদিবাসী। পালং শাক ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়, পাতার আকার ২-৩০ সেমি, এবং চওড়া ১-১৫ সেমি পর্যন্ত। এর পাতা সরল, ডিম্বাকার বা ত্রিভুজাকার হয়ে থাকে। পালং শাকের প্রাচীনতম নিদর্শন হলো এটি পাওয়া গিয়েছিল চীনে।
কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে এই শাক নেপাল থেকে চিনি এসেছে(সম্ভবত ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ)। পালং শাক অনেক পুষ্টিকর ও রুচিশীল একটি খাবার। আপনি যদি পালং শাক তাজা কিংবা অল্প সিদ্ধ করে খান তাহলে অনেক বেশি অ্যান্ড্রয়েড এক্সিডেন্ট পাবেন। তবে আসুন পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।
পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
শীতকালীন সবজির মধ্যে পালং শাক অন্যতম, শারীরিক সুস্থতার জন্য এর মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি পেতে পালং শাক খাওয়া উচিত। পালন শাকের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, আয়রন, খনিজ লবণ, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম,ফসফরাস ইত্যাদি যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
শরীরকে রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে এবং সংকরমনের ঝুঁকি কমাতে পালংশাক খাওয়া উচিত। পালং শাক খাওয়ার ফলে আমাদের আরো কি কি উপকার হতে পারে, আসুন এগুলো আলোচনা করি।
রক্তচাপ কমাতেঃ নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কারণ পালং শাকের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
চোখ ভালো রাখতেঃ চোখকে ভালো রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত পালন শাক খাওয়া উচিত। কারণ এতে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল যা দৃষ্টিশক্তি ক্ষতি হওয়া থেকে বাধা দেয়। তাছাড়া পালং শাকের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন যা চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
ওজন কমাতেঃ পালং শাকের মধ্যে কম পরিমাণ ক্যালসিয়ামের রয়েছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে ফাইবার, আছে আয়রনের উৎস। এর কারণে পালং শাক হজম হতে সময় লাগে, ফলে আমাদের খাওয়ার চাহিদা কম থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ আপনার যদি কষ্ট কাঠিন্য সমস্যা থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে পালং শাক খেতে পারেন। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যা কষ্ট কাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বক ভালো রাখতেঃ পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দূরীকরণে ও মুখে লাবণ্য বৃদ্ধিতে পালং শাক অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া ক্ষতস্থানে, কোথাও পুড়ে গেলে কালশিরা পড়লে পালং শাকের রস লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃপেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ক্যারোটিন এবং ক্লোরোফিল। অতএব নিয়মিত পালন শাক খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ক্যান্সারে ঝুঁকে কমাতে সহায়ক হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত পালং শাক উচিত। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ও ভিটামিন সি যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অতএব আমার এটা বলতে পারি যে পালং শাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এজন্য শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে আমাদের উচিত নিয়মিত পালং শাক খাওয়া ।
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকায় সকল পুষ্টিকর উপাদান রাখা উচিত। এতে গর্ভবতী মহিলা ও অনাগত সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যগত দিক ভালো রাখে। পুষ্টিকর উপাদান গুলোর মধ্যে পালং শাক অন্যতম। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকার। আসুন জেনে নিই গর্ভবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?।
ফলিক এসিড এবং আয়রনঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়:৩০%-৫০% হয়ে থাকে। ফলে গর্ভবতী মহিলাদের আয়রন ও ফলিক এসিডের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নিয়মিত পালন শাক খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের আয়রন ও ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
ক্যালসিয়ামঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ক্যালসিয়ামের কারণে উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে গর্ভবতী মহিলারা উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাবে।
ভিটামিনঃ পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণে গর্ভবতী মহিলাদের পালং শাক খাওয়া উচিত। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এছাড়া যে সকল গর্ভবতী মায়েরা অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভোগে তাদের নিয়মিত পালন শাক খাওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগলে আপনি পালং শাক খেতে পারেন। গর্ব অবস্থায় শিশুর শারীরিক সুস্থতা, মস্তিষ্কের বিকাশে পালং শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে
ভিটামিন ও পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ সবজির মধ্যে পালং শাক অন্যতম। মানব শরীরের উপকারে সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে এই পালং শাকে। অতি ১০০ গ্রাম পালং শাকের প্রোটিন ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, ফাইবার বা আঁশ ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি গ্রাম, ফসফরাস ২০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৯৩০০ আই ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৩ মিলিগ্রাম ইত্যাদি।
পালং শাক কিভাবে খেতে হয়
সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ এবং লুটেইন। লুটেইন পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে পালং শাকে। পালং শাকে থাকা লুটেইন শরীরে চর্বি কমাতে সাহায্য করে ফলে রক্তনালি বন্ধ হওয়া সম্ভাবনা কম থাকে। এবং পালং শাক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পালং শাকের পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে সঠিক উপায় পালন সাক্ষাতে হবে।
গবেষকরা বিভিন্নভাবে যেমন ভেজে, সিদ্ধ করে, ও ভাপে পালং শাক রান্না করে দেখেছেন যে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পালং শাক রান্না করলে অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এমনকি পালং শাকের মধ্যে থাকা লুটেইন নষ্ট হয়ে যায়। পালং শাক কাঁচা অবস্থায় খেলে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়।
গবেষকরা দেখেছেন যে, মাইক্রোওভেনে পালং শাক গরম করলে লুটেইন কমে যায়। এজন্যে তারা পালং শাক রান্না করে না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সালাত ও স্মুদি তৈরি করে পালং শাক খাওয়া যায়। সালাতের সঙ্গে দুধ অথবা দই, ক্রিম মিশিয়ে নিলে খাবারটা আরো পুষ্টি কারো সুস্বাদু হবে। এজন্যে পালং শাকের পুষ্টি উপাদান সঠিক মাত্রায় পাওয়ার জন্য আমাদের কাঁচা পালং শাক খাওয়া উচিত।
পালং শাকের অপকারিতা
সবুজ শাক সবসময় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর মানে এই নয় যে আপনি নিয়মিত তিন বেলা সবুজ শাক খাবেন। অতিরিক্ত সবুজ শাক খেলে স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তেমনি পালং শাক স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত পালন শাক খেলে শরীরের জন্য কি কি অপকারিতা রয়েছে ।
পুষ্টির ঘাটতিঃ অতিরিক্ত পালংশাক খাওয়ার ফলে শরীরের অন্যান্য খনিজ পদার্থের ক্ষমতাকে বাধা প্রদান করতে শুরু করে। কারণ পালং শাকের মধ্যে রয়েছে অক্সালিক এসিড যা জিংক, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের সঙ্গে একত্রিত হলে খনিজ পদার্থের ঘাটতি হতে পারে।
কিডনির ঝুঁকিঃ অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়ার ফলে শরীরে যখন অক্সালিক এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে তখন এই সিস্টেম টি আমাদের শরীরের জন্য কঠিন হয় বের করে দেয়া। ক্যালসিয়াম অক্সলেট জমা হয় কিডনিতে যা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
জয়েন্টের সমস্যায়ঃ পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন নামক এক ধরনের যৌগ এবং অক্সালিক এসিড। যা আপনার জয়েন্টের সমস্যা বাড়াতে পারে। এজন্য যাদের জয়েন্টে ব্যথা, গোড়ালিতে ফোলা ভাব এবং প্রদাহ সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত পালংশাক হওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
লেখকের মন্তব্য
পালং শাক আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। পালং শাক আমরা বিভিন্নভাবে খেতে পারি। পালং শাকের মধ্যে থাকা পুষ্টি ও ভিটামিন সমূহ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এজন্যে পালং শাককে অবশ্যই আমাদের ছবির তালিকা রাখা উচিত। তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন এবং অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দেবেন ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url