কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকে আপনাদের সামনে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অতি প্রাচীন কাল থেকে কালোজিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। আপনারা কি জানেন কালো জিরা কি উপকারিতা রয়েছে এবং আমরা কালোজিরা কেন খায়। তবে আসুন জেনে নিই কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
কালোজিরা-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
কালোজিরা হলো এমন একটি বীজ যাতে রয়েছে প্রায় শতাধিক পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কালোজিরা কে বলা হয় মহা ঔষধ। নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। কালোজিরার মধু বিশ্বব্যাপী সমাদিত রয়েছে এবং কালোজিরা তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

ভূমিকা

আমার অনেকেই কালোজিরা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। কিন্তু জানি কি কালোজিরা আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকারে আসে। কালোজিরা কে সাধারণত আমরা মসলা হিসেবে খেয়ে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন কালোজিরা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়, ইউনানী, ও কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার মধু ও তেল আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। আসুন জেনে নেই কালোজিরা আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকারে আসে সে বিষয়ে কিছু তথ্য।

কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কালোজিরা সকল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল বা বীজ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরার গুরুত্ব অপরিসীম। এমন কোন রোগ নেই যে রোগের ওষুধ কালোজিরার মধ্যে নেই। আসুন জেনে নেই কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের জন্য কি কি উপকারিতা রয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কালোজিরা ঔষধি গুনে গুণান্বিত একটি বীজ বা ফল যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঔষধি গুনে সমৃদ্ধ কালোজিরা শরীরের অঙ্গ পতঙ্গ সতেজ রাখে। এজন্য আমাদের উচিত হবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া।

মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তিঃ কালোজিরা তেল মাথা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা তেল মাথায় নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন দেখবেন আপনার মাথা ব্যাথা নেমি সেই দূর হয়ে গেছে। কালোজিরা তেল ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ এজন্য আপনার মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে পারেন।

সর্দি কাশি থেকে মুক্তিঃ যারা সর্দি কাশির মতো রোগে ভুগছে তারা কালোজিরা বা কালোজিরা তেল মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে দ্রুত সর্দি কাশি সেরে যাবে। বিশেষ করে শিশুদের সর্দি-কাশি লেগেই থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি কালোজিরা ও মধু আপনার সন্তানের খাওয়ালে দ্রুত সেরে উঠবে।
এজন্য আপনাকে নিয়মিত এক চামচ কালোজিরা তেল ও মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার খেতে হবে। এছাড়াও আপনাদের যদি সর্দি কাশি ও জ্বর হয় তাহলে কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু ও তুলসী পাতা খেতে পারেন দেখবেন দ্রুতই আপনার সর্দি কাশি ও জ্বর সেরে যাবে।

মাথার চুল পড়া থেকে মুক্তিঃ মাথার চুল পড়া রোধ করতে কালোজিরা তেল খুবই উপকারী। এই তেল আপনার চুলের গোড়া মজবুত করে এবং পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে। এজন্য আপনাদের যাদের চুলের বিভিন্ন রকমের সমস্যা রয়েছে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে নিয়মিত কালোজিরার তেল চুলে ব্যবহার করুন, তাহলে দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যে আপনার চুল পড়া সহ চুলের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

এসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যাঃ আপনাদের যাদের এসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কালোজিরা খেতে পারে। গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এক গ্লাস দুধের মধ্যে পরিমাণ মতো কালোজিরা মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খেলে আপনার গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।

পেটে সমস্যা সমাধানঃ যারা নিয়মিত পেটে নানা রকমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা পেটেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কালোজিরা খেতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে কালোজিরা ভেজে গুড়া করে নিতে হবে। এরপর পরিমাণ মতো কালোজিরার গুড়া এক গ্লাস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত সকাল ও বিকাল পান করুন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি পেটে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ডায়েটে কালোজিরাঃ আপনারা যারা নিজেদেরকে ফিট রাখার জন্য ডায়েট করে থাকেন। তাদের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো কালোজিরা। ডায়েট করার জন্য আপনি প্রতিদিন তরকারি রান্নাতে বা রুটি বানানোর সময় কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়ার জন্য মধু ও জলের সঙ্গে কালোজিরা মিশিয়ে খেতে পারেন।

ওজন কমাতেঃ কালোজিরা আপনার ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ কালোজিরার মধ্যে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি যা আপনারা ওজন কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ওজন কমানোর জন্য কালোজিরার তেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ কালোজিরা হলো এমন একটি উপাদান যার মধ্যে সকল রকমের ঔষধি গুনাগুন বিদ্যমান। কালোজিরা খাওয়ার ফলে আপনার চোখের লাল সারাতে এবং চোখের নিচে কালো দাগ সারাতে সহায়তা করে। এজন্য আমাদের উচিত হবে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার গুরুত্ব অপরিসীম। কালোজিরার মধ্যে রয়েছে এমন সব পুষ্টি উপাদান যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। আপনি যদি নিয়মিত চা অথবা গরম জলে কালোজিরা ভিজিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধঃ বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস একটি মরণব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি নিয়মিত কালোজিরা খেতে পারেন। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে কালোজিরা বা চায়ের সঙ্গে কালোজিরা খেতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কালোজিরা-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তিঃ কালোজিরা আপনার জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। কালোজিরা মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা যেকোনো রাসায়নিক পদার্থের বিষাক্ততা কমাতে সহায়তা করে। যার ফলে আপনার লিভার সুস্থ থাকে। জন্ডিস থেকে মুক্তি ও লিভারকে সুস্থ রাখতে আপনি নিয়মিত কালোজিরা খেতে পারেন।

হাড় ও জয়েন্টের ব্যথাঃ হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা দ্রুতই সারাতে পারে কালোজিরা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের হাড় ও জয়েন্টে ব্যথার কারণে চলাফেরা করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আপনি যদি নিয়মিত ব্যাথার স্থানে কালোজিরা তেল হালকা গরম করে লাগাতে পারে তাহলে দ্রুতই আপনার হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় হবে।

উজ্জ্বল ত্বকের জন্যঃ আপনার উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কালোজিরা বেশ উপকারী। এছাড়াও মুখের ব্রণ ও কালো দাগ সারাতে কালোজিরা কবি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মুখের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে কালোজিরা তেলের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং দিনে সেটা দুইবার ব্যবহার করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
কিডনির সমস্যাঃ যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কালোজিরা ভীষণ উপকারী। কালোজিরা শরীরের দূষিত পদার্থ গুলো বের করিতে সহায়তা করে। কিডনি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে হালকা গরম পানিতে কালোজিরার গুড়া ও মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেতে হবে তাহলে আপনি কিডনির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভব না কমে যায়।

হাঁপানি থেকে মুক্তিঃ আপনি হয়তো দেখেছেন যে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে হাঁপানি সমস্যা বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এই হাঁপানি থেকে মুক্তি দিতে পারে কালোজিরা। হালকা গরম পানিতে কালোজিরা মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মস্তিষ্কের উন্নতিঃ কালোজিরার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দস্তা আয়রন ও ফ্যাটি অ্যাসিড যা মানব দেহের মস্তিষ্কের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কালোজিরা খাওয়ার ফলে আপনার চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং ব্রেন পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে কালোজিরা গুরুত্ব অপরিসীম।

কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখেঃ কালোজিরা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কালোজিরা আমাদের রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের আগে সহায়তা করে এবং খারাপ কোলেস্টরেল বের করে দিতে সহায়তা করে। এজন্য শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া উচিত।
কোলেস্টেরলের-মাত্রা-বজায়-রাখে
মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতেঃ কালোজিরা মায়ের বুকের দুধ বেধেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য যে সকল মায়েরা তাদের সন্তানের বুকে দুধ দিতে পারেন না। তারা যদি প্রতিদিন রাতে কালো জিরার গোড়া দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারে তাহলে তাদের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে। তবে কালোজিরা সঙ্গে যদি মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারে আসে।

চর্ম রোগ থেকে মুক্তিঃ যাদের চর্মরোগ রয়েছে তারা যদি নিয়মিত কালোজিরা তেল ব্যবহার করে তাহলে তাদের চর্মরোগ সেরে যাবে। এজন্য কালোজিরা সঙ্গে হলুদের গুড়া ও মধু মিশিয়ে দিনে তিন চারবার খাবেন। তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার চর্ম রোগ ভালো হয়ে যাবে।

কালোজিরার অপকারিতা

আমাদের শরীরের জন্য কালোজিরার উপকারিতা যেমন অপরিসীম তেমনি কালোজিরার কিছু অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আসুন জেনে নেই অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের কি কি সমস্যা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য।
  • আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কালোজিরা খায় তাহলে আমাদের স্কিনে এলার্জি দেখা দিতে পারে। এজন্য আমাদের উচিত হবে পরিমাণ মতো কালোজিরা খাওয়া।
  • অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাধা কমে যেতে পারে। ফলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য আমাদের উচিত হবে অতিরিক্ত কালোজিরা না খাওয়া।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়া ভালো নয়। কারণ অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই শরীরের শর্করা চেকআপ করে নেওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কালোজিরা খাওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য

আমরা এত সময় কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। কালোজিরার মধ্যে সকল রোগের উপশম রয়েছে। কালোজিরা মধ্যে সব রকমের পুষ্টি উপাদান ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরের সমস্ত রকমের রোগের ওষুধ হিসাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের উচিত হবে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনাদেরকে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং অন্যদের এই পোস্টটি দেখার সুযোগ করে দেবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url