পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

আমাদের দেশে অনেক পরিচিত একটি সবজি ফটো। পটল দিয়ে আমরা নানা রকমের সবজি খেয়ে থাকি, যেটা অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে ।পটলের তরকারি যেমন পটল ভাজি ,পটলের পোস্ত, পটলের ভর্তা, পটলের দোলমা ইত্যাদি। এমনকি হোটেলে খোসাও আমরা খেয়ে থাকি। পটলের খোসা দিয়ে ভর্তা অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।
পটল-খাওয়ার-উপকারিতা -ও-অপকারিতা
পটল কে আমরা বিভিন্ন তরকারির সাথে রান্না করে খায়, কিন্তু আপনি কি জানেন পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তবে আসুন আমরা জেনে নিই পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ভূমিকা

দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক রকমের সবজি খেয়ে থাকি। পটল এদের মধ্যে অন্যতম। পটল আমরা প্রায় সব তরকারির মধ্যে দিতে পারি। পটল সাধারণত গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও, বর্তমানে প্রায় সব সময় পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারে পটলের তরকারি খেয়ে থাকি। এই পটলে আছে অনেক গুণ ও উপকারিতা। নিম্নে পটলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

পটল খেলে কি কি উপকার হয়

আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি সবজি হল পটল। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক পরিবারে পটলকে সবজি আকারে খাওয়া হয়। পটলে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা। পটলের বিভিন্ন রকমের উপাদানের মধ্যে এন্টারসিডেন্ট ও ক্যালসিয়াম উল্লেখযোগ্য।
কেউ যদি নিয়মিত এই সবজি খেয়ে থাকে তাহলে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া পটলের পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এই সবজিটি সবার কাছে অনেক প্রিয়। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক পটলের কি কি উপকারিতা রয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ পটল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পটলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ১, বি ২, সি ম্যাগ্নেসিয়াম, পটাশিয়াম যা ইমিউনিটি বাড়াতে ভূমিকা রাখে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া পটলের মধ্যে থাকা ফাইবার হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

রক্ত পরিষ্কার রাখতেঃ পটল রক্ত পরিষ্কার রাখতে ভুমিকা রাখে এবং ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। পটলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ ও সি আমাদের শরীরে রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি তোকে সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে এবং উন্নত স্বাস্থ্য উপহার দেবে। এ সকল উপকার পেতে আমাদের অবশ্যই উচিত খাবার তালিকায় পটল রাখা।

কোলেস্টেরল কমাতেঃ পটলের মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় এটা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের নিয়মিত পটলের তরকারি খাওয়া উচিত। কারণ পটল খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ আমাদের দেশে অনেক মানুষই কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভোগে। এর প্রধান কারণ হলো খাদ্য অভ্যাস অনিয়মিত। তাছাড়া আমরা অধিকাংশ সময়ে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খায়। যার কারণে আমাদের হজম সমস্যা বিঘ্নিত হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। আপনি যদি নিয়মিত পটল এবং পটলের বিচি খেতে পারেন, তাহলে এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ এটা আমাদের সবারই জানা যে যার হজম প্রক্রিয়া যত ভালো সে শারীরিকভাবে ততই সুস্থ। কারণ হজম শক্তির উপরে আমাদের শরীরের ব্যালেন্স নির্ভর করে। আমাদের শরীর যদি হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পাদন না করে, তাহলে আমরা বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হই। আপনি যদি নিয়মিত পটল খান তাহলে আপনার হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে।
পটল-খাওয়ার-উপকারিতা -ও-অপকারিতা
মাথা ব্যাথা দূর করতেঃ আমাদের সকলকে অবশ্যই জানা উচিত যে পটলে অনেক পুষ্টি গুনাগুন ও ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। আপনার যদি কখনো মাথা ব্যথা করে তাহলে পটলের রস মাথায় নিলে, আপনার মাথাব্যথা সেরে যাবে। এবং আপনি যদি হোটেলের রস নিয়মিত তুলে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ পটলে ক্যালোরি পরিমাণ কম থাকায় আপনি বেশি খেলেও আপনার ওজন বাড়বে না। আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখতে চান তাহলে নিয়মিত পটল খেতে পারেন। কারণ পটলে আসে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরে কোলেস্টরেল ও চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক ভালো রাখতেঃ পটলের রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা আপনার ত্বকের বার্ধক্যের লক্ষণ গুলো এড়ানো সম্ভব। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পটল বীজের পুষ্টিগুণ

পটলের বীজে বেশ কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। পটলের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।পটলের বীজে রয়েছে প্রোটিন ফাইবার ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে।
পটলের বীজ হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।পটলের বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে এনটিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।পটলের বীজ ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

পটল পাতার রস খেলে কি হয়

পটলে যেমন উপকারিতা আছে তেমনি পটলের পাতা রয়েছে অনেক গুনাগুন। পটলের পাতা শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ের কাজ করে থাকে। শরীরের ক্ষতস্থান সারাতে পটলের পাতা রস কার্যকারী ভূমিকা রাখে। তাছাড়া যাদের মাথা চুল পড়ে যাচ্ছে তারা যদি পটল পাতা রস মাথায় মাখে তাহলে তাদের চুল পড়া বন্ধ করতে ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে পটল ভাতার রস দিয়ে অনেক ঔষধি কাজ করা হয়ে থাকে।

পটলের খোসার উপকারিতা

আপনি কি জানেন পটলের খোসা ও আছে অনেক পুষ্টি গুনাগুন। কিন্তু আমরা পটলের খোসা কে উপেক্ষা করে। কিন্তু পটলের খোসা আমাদের শরীরে অনেক উপকারে আসতে পারে। নিচে পটলের খোসা উপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা।

পটলের পুষ্টিগুণ

বর্তমান সময়ে পটলের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। পটলের পুষ্টিগণ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পটলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলোঃ
পটলের-পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম পটলের মধ্যে আছে খাদ্য শক্তি ১০০ কিলো ক্যালরি, ফাইবার ৩ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, লোহা ১.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৬৫ আই ইউ, শর্করা ৪.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ৪১ মিলি গ্রাম, পটাশিয়াম ৮৪ মিলিগ্রাম এবং চর্বি ০.৭ গ্রাম।

পটলের অপকারিতাঃ

আমরা যে সকল খাদ্য উপাদান গুলো নিয়মিত গ্রহণ করি, সেগুলো যেমন আমাদের শরীরে উপকারে আসে, তেমনি এগুলো অনিয়মিত ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিও করে। সে ক্ষেত্রে পটল এর ব্যতিক্রম নয়। পটল খেলে যেমন আমাদের শরীর ভালো রাখে, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকার সাধিত হয়।যেমনযেসব ব্যক্তির এলার্জিজনিত রোগ আছে সে সকল ব্যক্তি পটল খেলে এলার্জি হতে পারে। যাদের এলার্জি আছে তাদের উচিত পটল এড়িয়ে চলা।

একসাথে অধিক পরিমাণে পটল না খাওয়া।যে সকল ব্যক্তিদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই অতিরিক্ত পটেল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত পটল খাওয়া হবে আপনার গ্যাস্ট্রিক আরো বেড়ে যাবে। তাই অতিরিক্ত পটল খাওয়া উচিত নয়।পটলের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই যাদের হজম শক্তিতে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পটল খাওয়া মোটেও উচিত নয়।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা এত সময় আলোচনা করলাম পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং আমরা আরো জেনেছি পটলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আশা করি আপনি পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পটলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে। তাই নিয়মিত ভাবেই পটল খাওয়ার অভ্যাস করুন। যাদের গ্যাস্ট্রিক এবং হজম শক্তিতে সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই পটল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

যদি আপনার খেতে ইচ্ছা করে তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তারপরে খাবেন। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত পটল খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পটল খাওয়া থেকে বিরতি থাকিবেন সঠিক নিয়ম অনুযায়ী পটল খাওয়ার চেষ্টা করুন। পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং এরকম পোস্ট আরো পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url