গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় লেবু খেলে কি হয়। গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়ার উপকারিতায় বা কি, লেবু খেলে ক্ষতি বা কি কি হতে পারে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ব অবস্থায় লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায়-লেবু-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় একজন নারী সব সময় চিন্তিত থাকে তার খাবার নিয়ে। কি খেলে গর্ভ অবস্থায় সে সুস্থতা অনুভব করবে এবং নতুন মেহমানের কোন ক্ষতি হবে কিনা সেই দিকে। ঠিক তেমনি লেবু খাওয়া সম্পর্কেও সে চিন্তিত থাকে লেবু খেলেও কোন সমস্যা হবে কিনা। তাহলে আসুন জেনে নিই লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মেয়েরাই চিন্তিত থাকে তার খাওয়ার বিষয় না। এবং চিন্তা করে অনাগত সন্তান নেই। এ অবস্থায় কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত নয় সে বিষয়ে। অনেকেই ভাবেন গর্ভকালীন অবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কিনা, কখন খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে সে বিষয় নিয়ে।

তাহলে আসুন জেনে নিই লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভকালীন সময়ে লেবু খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় এবং অপকারিতায় কি।

গর্ভবস্থায় লেবু খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মায়েদের অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। কারণ পুষ্টিকর খাবার মায়ের শরীর সুস্থ রাখে ও সন্তান সুস্থ ও স্বাবলম্বী হয়। এজন্য মায়েদের উচিত খাবার তালিকায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার রাখা। এ পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে লেবু হতে পারে অন্যতম একটি খাবার। লেবুর রস আমাদের মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে দ্রুত সমাধান দেয়।

গর্ভবতী মায়েদের খাওয়া রুচি সাধারণত কম থাকে। মুখে রুচি ফিরিয়ে আনা যায় লেবু খাওয়ার মাধ্যমে। এবং গর্ভকালীন সময়ে যে সকল মায়ের বমি বমি ভাব হয়, লেবু খাওয়ার মাধ্যমে সেগুলো দ্রুত ছেড়ে যায়। কারণ লেবুর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬ সহ রাইবোফ্লাইবিন এর মত উচ্চ খনিজ ও ভিটামিনসমূহ।

যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ সমস্ত পুষ্টি উপাদানের দিকে খেয়াল রেখে, গর্ভবতীর মায়েদের উচিত খাবার তালিকায় লেবু রাখা। লেবুর মধ্যে রয়েছে লিমনয়েড নামক একটি পদার্থ যা ক্যান্সার রোগের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লেবুর রস শরীরে চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

লেবুর রসের মধ্যে থাকা উপাদান ইনফেকশন ছাড়াতে দ্রুত কার্যকারী ভূমিকা রাখে। লেবুর রস খাবার হজম করতে সাহায্য করে। একটি লেবুতে প্রায় ২ গ্রাম ভিটামিন সি থাকে। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি উত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গর্ভবতী মায়েদের ইমিউনো কম্প্রোমাইজ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের ভিটামিন সি এর জন্য শুধু লেবুর উপর নির্ভরশীল হওয়ার উচিত নয়। লেবুর পাশাপাশি অন্যান্য যে সকল ফলে ভিটামিন সি রয়েছে সে সকল ফলও খাওয়া উচিত। তবে অবশ্যই জানা জরুরি যে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লেবু খাওয়া উচিত নয়। পরিমাণ মতো খেতে হবে। প্রয়োজনে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উত্তম।

গর্ভাবস্থায় লেবু খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি পাবে

গর্ভকালীন সময়ে প্রতিটি মায়ের সচেতন থাকা উচিত। কারণ মা অসুস্থ থাকলে সন্তান সুস্থ থাকবে। এজন্য গর্ভকালীন সময়ে প্রত্যেক মায়ের উচিত যে কোন খাবার খাওয়ার আগে ভেবে চিন্তা খাওয়া। এমন খাবার খাওয়া উচিত নয়, যা গর্ভবতী মায়ের ও সন্তানের সমস্যা হয়।
গর্ভাবস্থায়-লেবু-খেলে-যেসব-রোগ-থেকে-মুক্তি-পাবে
আবার এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে মা ও সন্তান ও ভাই ভালো থাকে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা লাভ করেন। এমনই একটি খাবার হল লেবু। গর্ভবতী মায়েরা পরিমাণ মতো লেবু খাওয়ার কারণে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে। আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় লেবু খেলে কি কি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণঃ গর্ভবতী মা-বোনদের বমি বমি ভাব বেশি একটু বেশি পরিমাণ হয়ে থাকে। লেবু এই বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। ২০১৪ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ১০০ জন গর্ভবতী মহিলাদের লেবুর ইনহেলেশন থেরাপি হালকা পরিমাণে থাকে যা গর্ভবতী মায়েদের বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপঃ লেবুর মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। লেবু ভিটামিন এর একটি মহা উৎস। লেবুর রস গর্ভবতী মায়েদের রক্ত কোষ গুলো শক্তিশালী করে তোলে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। লেবু কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
 
কষ্টকাঠিন্যঃ গর্ভবতী মহিলারা বেশিরভাগ সময় কষ্ট কাটিনতাই ভোগে। গর্ভবতী মহিলা যদি নিয়মিত ভাবে এক গ্লাস পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যতা সেরে যাবে ইনশাল্লাহ, এছাড়া লেবুর রস খেলে লিভার ভালো থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ লেবুর রস মিশ্রিত পানি খেলে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

হার ও পেশীঃ লেবুর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা গর্ভস্থ শিশুর হার ও বেশি কে মজবুত করে। লেবুর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।

পা ফোলাঃ গর্ভাবস্থায় মা ও বোনদের অনেকেরই পা ফুলে যায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পা ফোলা ও যন্ত্রণা দ্রুতই কমে যায়।

প্রসবকালীন বেদনাঃ প্রসবকালীন সময়ে মা-বোনদের অনেক কষ্ট হয়ে থাকে। আপনারা যদি লেবুর সঙ্গে মধু মিশ্রিত খান ,তাহলে এই কষ্ট অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে।

বদহজমঃ গর্ভাবস্থায় মা বোনদের বদহজমের সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। বদ হজম নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না কারণ আপনি যদি পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খায় তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ফলে বদহজমের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তাছাড়া পেটের কোন সমস্যা থাকলে সেটাও সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ।

গর্ভাবস্থায় লেবুর রস খাওয়ার অপকারিতা

যদিও লেবুর রস খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো। তারপরও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এজন্য লেবুর রস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উত্তম। কেননা গর্ব অবস্থায় গর্ভবতী মা-বোনদের অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় এবং বুক জ্বালাপোড়া করে।লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। লেবু খাওয়ার ফলে এই এসিড বেড়ে যেতে পারে।

 এজন্য গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। লেবুর মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার হাইড্রিক অ্যাসিড যে সকল গর্ভবতী মা-বোনদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে তারা লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ লেবুর রস খাওয়ার ফলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গর্ভবস্থায় প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় যদি প্রতিনিয়ত এক গ্লাস শরবত পান করা যায় তাহলে গর্ভবতী মা ও সন্তানের জন্য খুবই উপকারী আসবে। কারণ লেবুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, উচ্চমাত্রায় খনিজ ইত্যাদি। এগুলো গর্ভবতী মা ও সন্তানের শারীরিকভাবে সুস্থ ও সরল রাখতে সাহায্য করে।
গর্ভবস্থায়-প্রতিদিন-এক-গ্লাস-লেবুর-শরবত-খেলে-কি-হয়
গর্ভাবস্থায় মায়ের বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। খাওয়ার প্রতি রুচি বাড়ায়। গর্ভধারণকালে পেটের মধ্যে কোন ইনফেকশন হলে সেটা সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এজন্যেই আমাদের উচিত গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন এক গ্লাস লেবু শরবত পান করানো।

গর্ভাবস্থায় দিনের কোন সময় লেবুর রস পান করা ভালো

লেবু এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন খনিজ পদার্থ। ফলে এটি যে কোন সময় যেকোনো বয়সের মানুষই নিশ্চিন্তায় খেতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মায়েরাও যেকোনো সময় লেবু খেতে পারেন। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবুর রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

 
গর্ভবতী মা ও বোনরা যদি সকালে খালি পেটে ৪০০ মিলি লিটার পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে বিপাকক্রিয়া বাড়ায়। ফলে আপনি সারাদিনে যা খাবে তা সহজেই হজম হবে। খাওয়ার প্রতি রুচি বাড়বে, এবং শরীরও মন সতেজ থাকে। এবং গর্ভবতী মায়েদের বমিরভাব কমাতে সাহায্য করবে। এজন্য গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই উচিত নিয়মিতভাবে সকালে পানির সাথে মিশিয়ে লেবুর রস খাবেন।

গর্ভবস্থায় কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু খাওয়ার উপকারিতা

আমরা এত সময় গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এখন জানবো গরম পানিতে লেবু ও মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। লেবুতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি এবং মধুতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল এর মত উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। লেবুর রস ও মধু খেলে হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। লেবু রস মধু ও পানি একত্রে খেলে গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

লেখকের মন্তব্য

আমার এত সময় গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই উচিত, লেবুর রস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কারণ গর্ভাবস্থায় সামান্য ভুলের কারণে আপনার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটের ভিজিট করুন। কারণ আমরা আপনাদের জন্য এ ধরনের আর্টিকেল পাবলিস্ট করে থাকে। আমাদের আর্টিকেল পরে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url